
প্রকাশিত: Wed, Dec 7, 2022 9:15 PM আপডেট: Wed, Apr 30, 2025 12:35 AM
সেনেগালের মতো দলগুলো বারবার আসুক বিশ^কাপে
সুদেব চক্রবর্তী: চলুুন তাকানো যাক ২০০২ সালের দিকে। বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে পাপা বাউবা দিউফ গোল ঢুকিয়ে দেয় টপ ফেবারিট ফ্রান্সের জালে। এই স্ট্রাইকার বিশ্বকাপে প্রথম আসা দল সেনেগালের। তারা এভাবেই বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সকে প্রথম পর্বেই থামিয়ে দিয়েছিল। এমনকি তারা পৌঁছে যায় কোয়ার্টার ফাইনালে। অনেকেই তখন এ দেশটির নাম জানতো না। অথচ আফ্রিকান দেশগুলোর মধ্যে তো বটেই, দেশগুলোর মধ্যে সেনেগালই প্রথম স্বাধীন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছিল। যদিও বেশিরভাগ মুসলিম দেশ আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে ছিল, কেউ কেউ পাকিস্তানকে প্রত্যক্ষ মদদ দিয়েছে।
যাহোক, স্পোর্টসের শক্তিই এটা। যেমন বাংলাদেশ বিশ্বকাপ ক্রিকেটে আসার পর অনেক দেশই আমাদেরকে চিনে নেয়। কিংবদন্তি ফুটবলার ম্যারাডোনাও সেটা স্বীকার করেন। অথচ সেই কবে থেকে বাংলাদেশে ম্যারাডোনা তথা আর্জেন্টিনার সবচেয়ে বেশি সমর্থক। ২০০২ সালে সেনেগাল প্রথম এসেই একের পর এক অঘটন ঘটিয়েছিল। তারা গোল্ডেন গোল সিস্টেমে পা রাখে কোয়ার্টার ফাইনালে। যেটা ছিল ২য় গোল্ডেন গোলের ঘটনা। কিন্তু আফসোস এই সেনেগাল কোয়ার্টার থেকে বাদ পড়ে সেই গোল্ডেন গোলেই। তারা সেদিন তুরস্ককে আটকে দিয়েছিল প্রথম ৯০ মিনিটে। শুরু হলো গোল্ডেন গোলের ৩০ মিনিট পর্ব। গোল হলেই খেলা শেষ। আর্জেন্টিনা প্রথম পর্বেই বাদ যাওয়ায় সেবার ফুটবল আগ্রহটা মনের ভেতর টিকিয়ে রেখেছিলাম কেবল সেনেগালের কারণেই। রোজ ওদের নিয়ে কবিতা-টবিতা লিখে টিভির সামনে বসতাম। সবাই আমার পেছনে লাগতো। সেদিন তুর্কি স্ট্রাইকার ঝুঁটি বাঁধা প্লেয়ার ইলহান মেনসিজ, যাকে তুরস্ক প্রতি ম্যাচে দ্বিতীয়ার্ধে নামাতো, আরও গোল করতো। সেই ইলহান গোল্ডেন গোলপর্বে গোল করে সেনগালের গতি থামিয়ে দেয়। সেনেগাল সহজে আসেনি বিশ্বকাপে। কিন্তু ওদের ফুটবল শৈলি সবাই মনে রেখেছে। সেই বিশ্বকাপে ওদের এল হাজি দিউফ বিশ্বকাপের সেরা প্লেয়ারদের একজন নির্বাচিত হন। ১৬ বছর পর সেনেগাল আবার ফিরে আসে, মস্কোতে , ২০১৮ সালে। সেবার একটা ঘটনা ঘটলো। আমাদের ‘সভ্য’ সমাজের ‘সভ্য’ সাংবাদিকেরা অসভ্যের মতোন এক প্রশ্ন করে বসলো সেনেগালের কোচ অ্যালিউ সিসেকে। তারা বলল, ‘আপনি কি জানেন আপনি সবচেয়ে বেশি কালো কোচ?’ ছি, যাহোক, অ্যালিউ সিসে উত্তরে বললেন, ‘ স্পোর্টসের কোনো রঙ হয় না।’ এই অ্যালিউ সিসে সবচেয়ে কম বয়সী কোচ। ওই বলেছিলাম ২০০২ সালে তাদের চমকের কথা, সেই দল কিন্তু নেতৃত্ব দিয়েছিল এই সিসে, অর্থাৎ ক্যাপ্টেন হিসেবে। এবার কোচ হিসেবে রাশিয়া বিশ্বকাপে দেখালেন তার রণনীতি। সেনেগাল যে দুর্দান্ত খেলা দেখিয়েছিল তাতে পোলান্ড তো বটে গোটা মস্কো বিস্মিত হয়েছিল। অসাধারণ স্কিল, অ্যাটাক ও কাউন্টার অ্যাটাক। আহ, একদম গতিশীল। ডিফেন্স কিংবা বল দখল এমনকি দক্ষতায় পিছিয়ে নেই গোলকিপারও। ‘সভ্য’ সাংবাদিকেরা সিসের কৌশলে বিশ্বকাপ মিশন দেখে নিশ্চয়ই লজ্জা পেয়েছিল তাদের বর্ণবাদী মানসিকতার জন্য।
তবে সেবার অমন ফুটবলীয় কনফিউশন আগে দেখিনি। রাশিয়া বিশ্বকাপ ফুটবলে গ্রুপ পর্বে তিনটি দলেরই সমান পয়েন্ট। তাহলে কে যাবে লাস্ট সিক্সটিনে? সমাধানের পথ অবশ্যই ছিল ফিফার কাছে। সেই সূত্র মেনে বাদ গেল সেনেগাল-লায়ন অব তেরেঙ্গা। এভাবে বাদ পড়া এটাই প্রথম। হলুদ কার্ড বিচারে তারা পিছিয়ে ছিল। আর তাই হেরে গিয়েও জাপান চলে গেল নক-আউট পর্বে। আর সাদিয়ো ম্যানের দলের শেষ হয়েছিল রাশিয়া অধ্যায়। কলম্বিয়ার সাথে জীবন পণ লড়াই করেও তারা হেরে গেছিল। তিন আসর পর অ্যালিউ সিসে ফিরে এসেছিলেন। এবার ক্যাপ্টেন নয়, কোচ হিসেবে। কিন্তু থেমে ছিল স্বপ্ন। আমি বলছি না তারা ফেবারিট হিসেবে এসেছিল, কিন্তু একটি ভালো মানের দল হিসেবে এসেছিল। এবারের বিশ্বকাপে সেনেগাল আফ্রিকার আশার প্রতীক হয়ে এসেছিল। এবারও কোচ সেই অ্যালিউ সিসে। ক্যাপ্টেন সেই সাদিও ম্যানে। যথারীতি তারা উঠে এলো দ্বিতীয় রাউন্ডে। কিন্তু প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড। যথেষ্ট শক্তিশালী। তার উপর কোচ অ্যালিউ অসুস্থ। কয়েকজন ইনজুরিতে। ফলে সহজেই ইংল্যান্ড জয় তুলে নেয়। আর সেনেগাল। কাতার ছাড়ার টিকেট পেয়ে গেছে। সেনেগালের মতো দলগুলো বারবার আসুক বিশ্বকাপে। কেননা, এদের কারণেই স্পোর্টস হয়ে ওঠে সুন্দর, সর্বজনীন। ফেসবুক থেকে
আরও সংবাদ
চ্যাম্পিয়ন ভারত : একটা ছোট মুহূর্ত কতো বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে
‘ওই ক্যাচ হয়নি, সুরিয়াকুমারকে আবার ক্যাচ ধরতে হবে’!
কতো দেশ, কতোবার কাপ জিতলো, আমাদের ঘরে আর কাপ এলো না!
সংগীতাচার্য বড়ে গোলাম আলি খান, পশ্চিমবঙ্গের গর্ব সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও আমি
ইন্ডিয়ান বুদ্ধিজীবী, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও দেশের বুদ্ধিজীবী-অ্যাক্টিভিস্ট
মতিউর প্রতিদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ৮৩ ব্যাচের বন্ধুদের গ্রুপে সৎ জীবন যাপনের উপদেশ দিতেন!

চ্যাম্পিয়ন ভারত : একটা ছোট মুহূর্ত কতো বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে

‘ওই ক্যাচ হয়নি, সুরিয়াকুমারকে আবার ক্যাচ ধরতে হবে’!

কতো দেশ, কতোবার কাপ জিতলো, আমাদের ঘরে আর কাপ এলো না!

সংগীতাচার্য বড়ে গোলাম আলি খান, পশ্চিমবঙ্গের গর্ব সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও আমি

ইন্ডিয়ান বুদ্ধিজীবী, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও দেশের বুদ্ধিজীবী-অ্যাক্টিভিস্ট
